💢 কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার হল এমন এক যন্ত্র যার সাহায্যে গানিতিক এবঙ যুক্তিসঙগত নির্ভুল পরিবেশন করা যায়।

💢 কম্পিউটার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
আধুনিক সভ্যতার অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান হল কম্পিউটার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাবসা, পরিবহন, বিনোদন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, মহাকাশ গবেষণা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার আমাদের জীবনকে গতিময় ও সহজ করে দিয়েছে। বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্যেই বাড়ির ট্যাক্স, টেলিফোন বা জলের বিলের টাকা বাড়িতে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে জমা করা যায়।তাই সাধারণ মধ্যবিত্তের শয়নকক্ষেও এটি সহজে স্থান করে নিয়েছে। বর্তমান যুগকে সেই অর্থে কম্পিউটারের যুগ বলা হয়। আগেকার দিনে লিখতে পড়তে না জানলে কাউকে যেমন নিরক্ষর বলে গণ্য করা হত, বর্তমানে তেমনি কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে কোনো মানুষের শিক্ষাও অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধশালী করার জন্য কম্পিউটার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। 

💢 কম্পিউটারের কাজ(Function of Computer) :
কম্পিউটারের প্রধান কাজগুলি হল —
    1.ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ইনপুট নির্দেশগুলি গ্রহণ করা। 
    2.ইনপুট নির্দেশগুলিকে বিশ্লেষণ করা। 
    3.ফলাফলগুলিকে মনিটরে প্রদর্শন করা। 
    4.তথ্য ও ফলাফলগুলিকে মেমোরিতে সঞ্চয় করে রাখা। 
    5.ব্যবহারকারীর দেওয়া নির্দেশমতো প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। 

💢 গতি (Speed) :
হিসেবনিকেশ বা তথ্য বিশ্লেষণ সংক্রান্ত যেকোনো কাজই মানুষের চাইতে কম্পিউটার অতি দ্রুত গতিতে করতে পারে। কাজ করার এই গতি MIPS(Million Instructions Per Second) এককে পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ একটি কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে দশ লক্ষেরও বেশি নির্দেশ পালন করতে পারে। 


💢 নির্ভুলতা (Accuracy) :
কাজ করতে গিয়ে মানুষ ভুল করে।কম্পিউটার কিন্তু গণনা করার পর একেবারে নির্ভুল ফলাফল প্রদান করে। 
3.বহুমুখিতা(Versatility) :
উপযুক্ত প্রোগ্রামের সাহায্যে কম্পিউটার বিভিন্ন ধরনের কাজ অনায়াসে করতে পারে। যেমন – ছবি আঁকা, গান শোনা, গেমস খেলা, টাইপ করা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি।বিভিন্ন ধরনের কাজ করার এই ক্ষমতাকে বলা হয় বহুমুখিতা। 
4.স্বয়ংক্রিয়তা(Automation) :
কম্পিউটার একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র। তাই ব্যবহারকারীর নির্দেশমতো এটি সব কাজই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর পর করে যেতে পারে। 
5.সঞ্চয় ক্ষমতা(Storage Capacity) :
মানুষ কয়েক বছরের পুরানো ঘটনা মনে রাখতে পারে না, ভুলে যায়। কম্পিউটার কিন্তু তার মেমোরিতে বিপুল পরিমান তথ্য ভবিষ্যতে ব্যবহার করার জন্য সঞ্চয় করে রাখতে পারে। 
6.খরচ হ্রাস(Less Expensive) :
দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে কম্পিউটার ব্যবহৃত হওয়ায় মানুষের পরিশ্রম লাঘব হয় ও খরচ হ্রাস পায়। 
7.অধ্যবসায়(Diligence) :
একই কাজ বারবার করার জন্য মানুষ ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়। কম্পিউটার কখনোই ক্লান্ত ও বিরক্ত হয় না, সর্বদা একই গতিতে কাজ করেই চলে। 

💢 কম্পিউটার ব্যবহারের অসুবিধা(Disadvantage of Computer) :
1.বুদ্ধিহীনতা(Knowledge Less) :
কম্পিউটারের নিজস্ব কোনো বুদ্ধি নেই। ব্যবহারকারীর নির্দেশমতো এটি কাজ করে চলে, নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে কিছু করার ক্ষমতা কম্পিউটারের নেই। 
2.অলসতা(Lazyness) :
কম্পিউটারে কাজ করতে করতে হাতেকলমে কাজ করতে আর ইচ্ছে করে না। তাই আমরা অলস হয়ে পড়ি। 
3.নেটওয়ার্কজনিত সমস্যা(Network Problems) :
ব্যাঙ্কে, অফিসে কিংবা রেল স্টেশনে ইন্টারনেট লিংক ফেলিয়োর হলে গ্রাহক পরিষেবা বিঘ্নিত হয়। 
4.ভাইরাসের আক্রমণ(Virus Attacking) :
কম্পিউটার ভাইরাসের মাধ্যমে কাজের ব্যাঘাত ঘটে, কম্পিউটারগুলি মাঝেমধ্যেই খারাপ হয়ে যায় কিংবা ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল পাওয়া যায়। 


💢কম্পিউটারের ব্যবহার(Use of Computer) :
বিভিন্ন কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়, সেগুলি হল ——–
a.শিক্ষাক্ষেত্রে(In Education) :
পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন(OMR Sheet), পরীক্ষা প্রস্তুতি, মার্কসিট তৈরি, প্রবেশিকা পরীক্ষা কিংবা ভর্তি সংক্রান্ত কাজে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। 
b. যোগাযোগ ব্যবস্থায়(In Communication) :
ইন্টারনেট ও ই – মেল পরিসেবা সচল রাখতে, টেলি- যোগাযোগ ও উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা মজবুত রাখতে কম্পিউটারের ব্যবহার আবশ্যিক। 
c. বিজ্ঞান গবেষণায়(In Scientific Research) :
আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ভূমিকম্প বা সুনামির সতর্কতা দিতে কম্পিউটারের সাহায্য প্রয়োজন। বর্তমানে কৃত্রিম উপগ্রহগুলিও কম্পিউটারের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত হয়। এর ফলে একস্থান থেকে অন্যস্থানে তথ্য সম্প্রচারের কাজ সহজতর হয়েছে এবং বেতার ও দূরদর্শনের অনুষ্ঠান সম্প্রচারের কাজে গতি এসেছে। 
d. প্রশাসনিক কাজে(In Administration) :
রাজ্য, জেলা ও ব্লক স্তরের আধিকারিকদের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে মত বিনিময় করা কিংবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন ফর্ম ডাউনলোড করার জন্য কম্পিউটারের ব্যবহার অপরিহার্য। 
e. আইন- আদালতে(In Law and Order) :
বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহনে, অপরাধীদের রেকর্ড সংরক্ষণে কিংবা পুরানো রায়ের নথি অনুসন্ধানে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। 
f. চিত্ত বিনোদনে(In Entertainment) :
সিনেমা দেখা, গান শোনা, গেমস খেলা, কার্টুন দেখা, চ্যাটিং করা প্রভৃতি কার্যগুলি এখন কম্পিউটারের সাহায্যে সহজেই করা যায়। 
g. ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে(In Industry) :
কম্পিউটারের সাহায্যেই ইঞ্জিনিয়াররা সহজে বাড়ি বা স্থাপত্য শিল্পের নকশা তৈরি করেন। 
h. প্রকাশনার কাজে(In Book Publishing) :
কম্পিউটারের সাহায্য ছাড়া যেকোনো DTP – র কাজ, বইয়ের প্রচ্ছদ তৈরি ও অলংকরণের কাজ করা যেত না। 
i. ব্যাবসায়িক কাজে(In Business) :
ATM মেশিন থেকে টাকা তোলা, শেয়ার বাজারের কার্য পরিচালনা, জিনিসপত্র কেনা -বেচা, টিকিট বুকিং করা প্রভৃতি ব্যাবসায়িক কাজকর্মগুলি কম্পিউটারের সাহায্যে সহজেই করা যায়। 
j. চিকিৎসার কাজে(In Medical Treatment) :
রোগ নির্ণয়, রোগীর রেকর্ড সংরক্ষণ, সিটি স্ক্যান, MRI, আলট্রাসোনোগ্রাফি ও বাইপাস সার্জারির কাজে কম্পিউটারের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। 


💢 কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ(Parts of Computer) :
1. ইনপুট যন্ত্র(Input Device) :
কম্পিউটারের কাজ করার জন্য বাইরে থেকে যে সমস্ত তথ্য ও নির্দেশ দেওয়া হয় সেগুলির নাম ইনপুট এবং যে যন্ত্রের সাহায্যে ইনপুটগুলি দেওয়া হয় তাদের ইনপুট যন্ত্র বা ইনপুট ইউনিট বলা হয়।যেমন – কিবোর্ড(Keyboard), মাউস(Mouse), স্ক্যানার(Scanner),মাইক্রোফোন(Microphone), লাইট পেন(Light Pen), জয়স্টিক(Joystick), ডিজিটাল ক্যামেরা(Digital Camera) ইত্যাদি। 
2.প্রসেসিং যন্ত্র(Processing Device) :
যে যন্ত্রাংশটি ইনপুট যন্ত্রগুলি থেকে তথ্য ও নির্দেশ গ্রহণ করে সেগুলিকে বিশ্লেষণ করে ফলাফল প্রদান করে তাকে প্রসেসিং যন্ত্র বলা হয়।যেমন – মাইক্রোপ্রসেসর, CPU ইত্যাদি। মানুষের যেমন হৃৎপিণ্ড,কম্পিউটারের তেমনি প্রসেসিং যন্ত্র বা CPU বা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট। CPU দ্বারাই কম্পিউটারের কার্যগুলি পরিচালিত হয়। 
3.আউটপুট যন্ত্র(Output Device) :
ইনপুট তথ্যগুলি CPU দ্বারা বিশ্লেষিত হয়ে যে ফলাফলগুলি পাওয়া যায় সেগুলির নাম আউটপুট এবং যে যন্ত্রগুলির সাহায্যে আউটপুটগুলি পাওয়া যায় তাদের আউটপুট যন্ত্র বা আউটপুট ইউনিট বলা হয়।যেমন – মনিটর, প্রিন্টার, স্পিকার, প্লটার ইত্যাদি। 
4.সঞ্চয় যন্ত্র(Storage Device) :
যে যন্ত্রগুলি তথ্য সঞ্চয়ের কাজে ব্যবহার করা হয় তাদের স্টোরেজ ডিভাইস বা কম্পিউটার মেমোরি বলা হয়। স্টোরেজ ডিভাইস বা মেমোরিগুলি দুই ধরনের হয়। যথা —–
1.প্রাইমারি মেমোরি। যেমন – RAM, ROM, Register ইত্যাদি। 
2.সেকেন্ডারি মেমোরি। যেমন – হার্ড ডিস্ক, পেন ড্রাইভ, CD, DVD ইত্যাদি। 
8.কম্পিউটার আবিষ্কারের ইতিহাস(History of Computer) :
A. অ্যাবাকাস(Abacus) :
জিশু খ্রিস্টের জন্মের 3000 বছর পূর্বে চিনদেশের মানুষেরাই প্রথম অ্যাবাকাস ব্যবহার করে সংখ্যা গোনার কাজ শুরু করে। এটিই মানুষের তৈরি প্রথম গণকযন্ত্র(First Computer)। যন্ত্রটিতে কাঠ বা ধাতুর ফ্রেমের ভিতরে কয়েক সারি তারের মধ্যে অনেকগুলি পুঁতি থাকে। ফ্রেমের মাঝখানে একটি কাঠের ব্যবধায়ক থাকে। ব্যবধায়কটির দুপাশে প্রতিটি তারের একদিকে সাধারণত 5 টি করে এবং অপরদিকে 2 টি করে পুঁতি থাকে। যে পাশে 5 টি পুঁতি থাকে তাদের প্রতিটির মান “1” এবং 2 টি পুঁতি থাকে তাদের প্রতিটির মান “5”। আঙুলের সাহায্যে পুঁতিগুলি সরিয়ে এর সাহায্যে গণনা করা হয়। গণনা শুরু করার পূর্বে সব পুঁতিগুলিই ফ্রেমের কিনারার দিকে সরানো থাকে। যোগ করার সময় ওই জায়গা থেকে পুঁতিগুলিকে প্রয়োজন মতো ফ্রেমের ব্যবধায়কের দিকে সরিয়ে আনা হয়। যেমন – 5 টি পুঁতি লাগানো তার থেকে 2 টি পুঁতি সরিয়ে ব্যবধায়কের কাছে আনলে যোগফল 1 + 1 = 2 বোঝায়। ঠিক তেমনি 2 টি পুঁতি লাগানো তার থেকে 1 টি পুঁতি সরিয়ে ব্যবধায়কের কাছে আনলে “5” বোঝায়। তেমনি বামদিক থেকে 2 টি পুঁতি এবং ডানদিক থেকে(2 টি পুঁতি যুক্ত তার থেকে) 1 টি পুঁতি সরালে যোগফল হবে (1 + 1) + 5 = 7। 
বর্তমানে ছোটদের “সংখ্যা গোনা ” শেখানোর জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতেও অ্যাবাকাসের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।ছোটো বাচ্চাদের স্লেটের বিকল্প হিসেবে বাজারে অ্যাবাকাস কিনতে পাওয়া যায়। জাপানিরা অ্যাবাকাসকে “সরোবন ” নামে ডাকত। 
B. নেপিয়ারস বোনস(Napier’s Bones) :
অ্যাবাকাসের সাহায্যে যোগ বা বিয়োগ করা সম্ভব হলেও গুণ করা যেত না। 1617 সালে স্কটিশ গণিতজ্ঞ জন নেপিয়ার দুটি বড়ো সংখ্যার গুণফল দ্রুত নির্ণয় করার জন্য “নেপিয়ারস বোন” বা “নেপিয়ারের হাড়” নামে একটি গণকযন্ত্র আবিষ্কার করলেন। যন্ত্রটিতে দশটি লম্বা লম্বা হাড়ের তৈরি আয়তক্ষেত্রাকার দণ্ডের উপর একটি সংখ্যার টেবিল এমনভাবে খোদাই করা থাকত যাতে দণ্ডগুলি গায়ে গায়ে লাগিয়ে রাখলে সম্পূর্ণ টেবিলটি পড়া যেত আর কোনাকুনি কাটা দাগগুলি পাশের দণ্ডের গায়ে কাটা দাগের সঙ্গে মিলে গিয়ে কোনাকুনি লাইনের সৃষ্টি করত। 
প্রতিটি হাড়ের দণ্ডে দশটি সংখ্যা থাকে। দণ্ডগুলির প্রথম সংখ্যা যথাক্রমে 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 0 ; দ্বিতীয় সংখ্যা প্রথম সংখ্যার দ্বিগুণ অর্থাৎ যথাক্রমে 2, 4, 6, 8, ……….. 18,  0 ; এইভাবে নবম সংখ্যা প্রথম সংখ্যার নয়গুণ অর্থাৎ যথাক্রমে 9 18, 27,  ……….  81, 0 এবং দশম সংখ্যা প্রথমের শূন্যগুণ অর্থাৎ 0, 0, 0, 0 ……  0, 0 । 
মনে করো, 568 – কে  209 দ্বারা গুণ করতে হবে। তাহলে 5, 6, 8 প্রথম সংখ্যাবিশিষ্ট দণ্ড তিনটিকে পরপর বামদিক থেকে পাশাপাশি রাখতে হবে।এখন এই দণ্ড তিনটির দ্বিতীয়, দশম ও নবম ঘরের সংখ্যাগুলিকে কোনাকুনি যোগ করলেই নির্ণেয় গুণফল = 118712 পাওয়া যাবে। 
C. স্লাইড রুল(Slide Rule) :
1620 সালে ইংরেজ গণিতবিদ উইলিয়াম ওট্রেড “স্লাইড রুল” নামক গণকযন্ত্রটি তৈরি করেন। যন্ত্রটি নেপিয়ারস বোনস এর নীতি অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছিল। এর সাহায্যে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ও বর্গমূল করা হয়। যন্ত্রটিতে একটি চওড়া স্কেলের মাঝখানে একটি খাঁজ কাটা অংশে অপর একটি সরু স্কেল বসানো থাকত। সরু স্কেলটি ওই বড়ো স্কেলের খাঁজের মধ্যে এদিক – ওদিক সরানো যেত। দুটি স্কেলের গায়েই যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ও বর্গমূল করার জন্য বিভিন্ন সংখ্যা খোদাই করা থাকে। ছোট স্কেলটি সরিয়ে বড়ো স্কেলের সঙ্গে মিলিয়ে স্কেল দুটির গায়ে খোদাই করা সংখ্যা টেবিল থেকে অতিদ্রুত গণনা করার কাজে এই যন্ত্রটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। 
D. পাসকালাইন(Pascaline) :
1642 সালে ফরাসি গণিতজ্ঞ ব্লেস পাসকাল “পাসকালাইন” নামে একটি গণকযন্ত্র আবিষ্কার করেন। এর সাহায্যে বড়ো বড়ো যোগ দ্রুত করা যায়। এছাড়া বিয়োগ, গুণ এবং ভাগও এর সাহায্যে করা যায়। এটিই প্রথম আবিষ্কৃত “যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর”। যন্ত্রটির মধ্যে নানা আকৃতির পিন লাগানো চাকতি থাকত যা গিয়ারের মতো কাজ করত। যন্ত্রটির উপরের দিকে অনেকগুলি ডায়াল ও ছোটো ছোটো জানালা ছিল।জানালাগুলির ঠিক পিছনে ছিল 0 – 9 লেখা চাকতি। অঙ্ক কষার সময় ওই ডায়াল ঘুরিয়ে জানালায় অঙ্কের সংখ্যাগুলি আনতে হয়। গিয়ারের সাহায্যে এককের জানালার পিছনে যে সংখ্যা লেখা চাকতিটা লাগানো থাকে সেটি একপাক ঘুরলেই দশকের জানালার পিছনের চাকতিটা এক ঘর সরে যেত (ট্যাক্সির মিটারের মতো)। 
E. স্টেপড রেকনার(Stepped Reckoner) :
1671 সালে জার্মান গণিতজ্ঞ গডফ্রে লিবনিজ “স্টেপড রেকনার” নামে একটি গণকযন্ত্র তৈরি করেন।যন্ত্রটির সাহায্যে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ও বর্গমূল করা যেত। এই যন্ত্রটি “পাসকালাইন” অপেক্ষা কিছুটা উন্নত ছিল। এতে পাসকালের যন্ত্রের মতো সাধারণ পিন হুইলের পরিবর্তে স্টেপড হুইল লাগানো হয়েছিল। এই স্টেপড হুইলকে ঘুরিয়ে বা পাশাপাশি সরিয়ে গণনা করা হত। 
F. জ্যাকওয়ার্ড লুম(Jacquard Loom) :
1804 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার জোসেফ জ্যাকওয়ার্ড একটি তাঁত যন্ত্র আবিষ্কার করেন,যা “জ্যাকওয়ার্ড লুম ” নামে পরিচিতি লাভ করে।যন্ত্রটির সাহায্যে জামা – কাপড়ের উপর নকশা বানানোর কাজে সর্বপ্রথম ছিদ্রযুক্ত কার্ড ব্যবহার করা হয়েছিল। এটি তাঁত যন্ত্রকে স্বয়ংক্রিয় করে চালনা ও নিয়ন্ত্রণ করত। 
G. ডিফারেন্স ইঞ্জিন(Difference Engine) :
1822 সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক চার্লস ব্যাবেজ “ডিফারেন্স ইঞ্জিন” নামে একটি গণকযন্ত্র আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন গাণিতিক অপেক্ষকের মান নির্ণয় এবং ত্রিকোণমিতিক ও লগারিদমিক টেবিল তৈরি করা যেত। চার্লস ব্যাবেজই সর্বপ্রথম তাঁর তৈরি যন্ত্রে তথ্য সঞ্চয়ের ধারণাটি প্রয়োগ করেছিলেন। 
H.অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন(Analytical Engine):
1833 সালে ইংরেজ গণিতজ্ঞ চার্লস ব্যাবেজ আর একটি গণকযন্ত্র তৈরি করেন। যন্ত্রটির নাম “অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন”। এই যন্ত্রটিতেই সর্বপ্রথম ইনপুট -প্রসেস -আউটপুটের ধারণা প্রয়োগ করা হয়েছিল। ব্যাবেজের তৈরি এই যন্ত্রটিকে অনুসরণ করেই এখনকার আধুনিক কম্পিউটার তৈরি করা সম্ভবপর হয়েছে বলে চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়। চার্লস ব্যাবেজই সর্বপ্রথম স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সেই সময়ে এই ধরনের নিখুঁত যন্ত্র বানানোর জন্য যন্ত্রপাতির অভাব ছিল বলে তিনি এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে পারেননি।